Confiscation of Bangladesh Hindu Homes and Property Continues Unabated: Awami League Minister Mosharaf Hossain. forcibly confiscates prominent Hindu family's ancestral home and land, imprisons home owner Mr. Arun Guha, supporter-thugs beat up protesting Hindus, yet the ruling Awami League -- the so-called defender of non-Muslim Hindu and other minorities -- does not take any action.
-- a report by journalist Sitangshu Guha; 16 August 2015
মন্ত্রীর হিন্দুবাড়ী দখল এবং প্রাসঙ্গিকতা
শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর এক রাজনৈতিক উপদেষ্টার নাম ছিলো সমর গুহ, তিনি আমার আত্মীয় ছিলেন না। অবশ্য কেউ জিজ্ঞাসা করলে ঠাট্টা করে কখনো-সখনো বলতাম, হ্যা, কাকা। একইভাবে ফরিদপুরের ভজনডাঙার বাড়ী নিয়ে যে হইচই চলছে, সেই বাড়ীর মালিকের নাম অরুণ গুহ মজুমদার, গুহ হলেও উনি আমার আত্মীয় নন, পরমাত্মীয়। কারণ, ওনার বাড়ী নিয়ে যা ঘটছে, তা বাংলাদেশে হিন্দুদের জমিজমা দখলের একটি নিত্য-নৈমত্যিক চিত্র। এবার ব্যতিক্রম এই যে, মানুষ এখন জানছে হিন্দুর বাড়ী সবাই দখল করে, মন্ত্রীও। কিছুদিন আগে গাফফার চৌধুরী নিউইয়র্ক এসেছিলেন তখন তাকে এঘটনা বলেছিলাম, তিনি হেসে বলেন, 'হিন্দুর সম্পত্তিতো গনিমতের মাল'।
মন্ত্রী বা এমপি-দের হিন্দু সম্পত্তি দখলের একটি হিসাব দিয়েছেন রানা দাশগুপ্ত। ঐক্য পরিষদের এক সাংবাদিক সন্মেলনে তিনি যে তালিকা দিয়েছেন, তাতে ওই মন্ত্রীর দখলিকৃত সম্পত্তিও আছে। যদিও ড: আবুল বারাকাত তার বইতে বলেছেন, বাংলাদেশে হিন্দুর সম্পত্তির প্রায় ৭০ ভাগ আওয়ামী লীগারদের দখলে, তবুও ফরিদপুর হিন্দু বাড়ী ঘটনায় আমি আওয়ামী লীগকে দায়ী করতে চাইনা, যদিও তিনি আওয়ামী লীগের মন্ত্রী। এর কারণ হলো, উনি আওয়ামী লীগে নবাগত এবং লোকে বলে, জননেত্রী চাপের মুখেই তাকে মন্ত্রী বানিয়েছেন। মন্ত্রী অবশ্য ২০০৮-এর আগে কোন দল করতেন তা আমার জানা নাই, তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলেও তিনি যে সরকারী দলে থাকবেন বা সম্পত্তি রক্ষার খাতিরে থাকতে হবে তা বলা বাহুল্য।
এ বছর জানুয়ারিতে ঢাকা গিয়েছিলাম। আমার জিগীরী দোস্ত সুইডেন প্রবাসী সেলিমও তখন ঢাকায়। এপ্রিলের প্রথমে ফরিদপুর হিন্দু বাড়ীর ঘটনাটি আমার কাছে আসে। বাড়ীর মালিকের এক আত্মীয় জানান, পারলে যেন কিছু করি, কারণ বাংলাদেশে কেউ কিছু করতে অপারগ। এও জানালেন, ফরিদপুরে যারাই কথা বলতে চেয়েছেন, তাদের সবাইকে জেলে পুরে রাখা হয়েছে অথবা মেরে ঠ্যাং ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। ঐসময় প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে একটি নিউজ করি, যার হেডিং ছিলো, "মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই পরিবারটিকে বাঁচান"। দেশে-প্রবাসে অন্তত: হাজার দুই মিডিয়া, সাংবাদিক, বুদ্দিজীবী, সামাজিক মাধ্যমে তা প্রচার হয়। দেশের কোন পত্রিকায় তা ছাপা হয়েছে বলে শুনিনি। তবে বিদেশে এবং ওয়েবে তা ব্যাপক প্রচার পায়। ফেইসবুকে অগণিত শেয়ার হয়।
ওই নিউজটি ছিলো আসলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি আবেদন। কারণ, যেকেউ বুঝবে, প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ওই মন্ত্রীকে ঠেকানো কারো সাধ্যি নেই। ২৩শে এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর দফতরে এ ঘটনা পাঠানো হয়। ধারণা করি ওটা তার হাতে পৌছেনি। কারণ, মন্ত্রীর লোক সর্বত্র। সামাজিক মাধ্যমে নিউজটি দেখে এপ্রিলের প্রায় শেষদিকে আমার বন্ধু সেলিম সুইডেন থেকে ফোন করে প্রথমেই জানতে চায়, এ ঘটনা জানলাম কি করে? সেলিম বললো, সে ওই এলাকায় কারো বাড়ীতে সপ্তাহ খানেক অতিথি ছিলো এবং তখনই সব ঘটনা শুনে এসেছে। সবই সত্য। এও বললো, 'দোস্ত, কোন কাজ হবেনা। পুরো ফরিদপুরে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মুখ খোলার ক্ষমতা কারো নেই; বিএনপিও নয়, প্রশাসন তো ওনার কথায় ওঠেবসে'।
যাহোক, প্রথম রিপোর্টে মুখ্যত তিনটি বিষয় স্পস্ট ছিলো, তা হলো: অরুণ বাবুর কাছ থেকে জোর করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে, তাকে বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করে মন্ত্রীর আর একটি বাড়ীতে একরকম বন্দী করে রাখা হয়েছে এবং বাইরের সাথে যাতে কোনরকম যোগাযোগ তিনি রাখতে না পারেন তত্জন্যে সার্বক্ষনিক প্রহরা রাখা হয়েছে। তাছাড়া মন্ত্রী যেদিন বাড়িটি দখল নেন, সেদিন বাড়ীর মন্দিরটি গুড়িয়ে দেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলোও প্রতিবেদনটি পাওয়ার কথা। এ রিপোর্ট পেয়ে বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের এডভোকেট রবীদ্র ঘোষ তদন্ত করতে গিয়েছিলেন ফরিদপুর, সংশ্লিস্ট থানার পুলিশ তাকে বলেছে, 'ওই বাড়িতে গেলে তারা তার নিরাপত্তার দাযিত্ব নিতে পারবেন না'।
আজ রোববার শ্রী ঘোষের সাথে কথা হয়েছে। তিনি জানালেন মন্ত্রী তাকে কল দিয়েছিলেন ৮ই আগস্ট এবং জানতে চেয়েছেন, কেন তিনি ওই বাড়ীতে গিয়েছিলেন এবং যাওয়ার আগে অনুমতি নেননি কেন? তিনি ফোন নম্বরও দিয়েছেন। একইদিন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ডিবি নর্থ, রবিনবাবুকে তলব করেন এবং একই বিষয়ে জানতে চান। দুপুরে জানতে পারলাম, সমকালের পঙ্গু (!) সাংবাদিক প্রবীর শিকদারকে পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে গেছে। তিনচার দিন আগে তার সাথে আমার কথা হয়েছিলো। ফেইসবুকে তিনি স্পষ্টত: লিখেছেন, আমার মৃত্যুর জন্যে তিনজন মানুষ দায়ী থাকবেন, এরমধ্যে একজন ওই মন্ত্রী। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কেন তিনি মৃত্যুর কথা ভাবছেন? উত্তরে তিনি বলেছেন, সমকালে মন্ত্রী ও অন্য দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে তিনি লিখেছেন, তারপর থেকে হুমকি-ধামকী চলছে।
এবার আসা যাক, মন্ত্রীর এপিএস সত্যজিত মুখার্জীর কথা। সদ্য সত্যজিতবাবুর সম্পত্তির হিসাব চেয়েছে দুদক। বুঝতে কারো অসুবিধা হবার কথা নয়, কেন দুদক একজন ছাপোষা কেরানীর সম্পত্তির হিসাব চায়! এপিএস সত্যজিত দয়াময়ী ভবন দখলের বিষয়টির প্রতিবাদ করেন। ফলে ১৬এপ্রিল তার চাকুরী যায়। ১৭ এপ্রিল জেলা ছাত্রলীগ কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দিতে, কেন্দ্র দেয়নি। ২৪ মে তাই জেলা ছাত্রলীগ কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়। এপ্রিল-মে এই সময়ে তার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা দায়ের করা হয়। ১লা মে মন্ত্রী তার বাসায় শতাধিক কর্মীর সামনে যে ভাষণ দেন, তা মন্ত্রী কেন একজন সাধারণ নাগরিকও দিতে কুন্ঠা বোধ করবেন, প্রাপ্ত সংবাদে দেখা যায়, তাতে স্পষ্টত: সত্যজিতের বিরুদ্ধে আইনবিরুদ্ধ হুমকি ছিলো!
সত্যজিত মুখার্জীর বাবা মানস মুখার্জী। একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাতে কি! বাবা হবার অপরাধে ৭০ বছরের এই বৃদ্ধকেও পুত্রের মামলায় জড়ানো হয় এবং গ্রেফতার করা হয়। ৯ই আগস্ট একটি মিডিয়ায় হেডিং দেখলাম, 'কারাগারই মুক্তিযোদ্ধা মানস মুখার্জীর ঘরবাড়ী'। সত্যজিতের মা মন্ত্রীর সাথে কথা বলেছিলেন। তারপর একইদিন মন্ত্রীর একজন সহকারী পাল্টা ফোনে জানান, সত্যজিত সারেন্ডার করলেই সবঠিক হয়ে যাবে। থানাও একই কথা বলেছে। সত্যজিতকে মেরে ফেলার হুমকী আছে, বেচারা সারেন্ডার করে কি করে? মন্ত্রীর এপিএস সত্যজিত নিশ্চয় আগে ক্রিমিনাল ছিলেন না, তাহলে মন্ত্রী তাকে এপিএস করতেন না, কেউ তা করেনা। তাযদি হয় তাহলে বরখাস্তের দুইমাসের মধ্যে যখন সত্যজিত জীবন নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, তখন হটাত কি করে তিনি এতবড় অপরাধী হয়ে উঠলেন ক্যামনে?
আর শুধু কি সত্যজিত? না, যারাই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে গেছেন কেউই ছাড়া পাননি। সত্যজিতের স্ত্রী শুমিকা মজুমদারের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। মানসবাবুকে থানায় খাবার দিতে গেলে রূপক সাহা নামে একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং অকথ্য নির্যাতন করে। সত্যজিতের পক্ষ অবলম্বন করায় জেলা আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা দিয়ে তাকে জেলহাজতে পাঠান হয়। জেলা ছাত্রলীগের নীতিশ সাহা, মোখলেসুর রহমান, বিটিভি'র ফরিদপুর প্রতিনিধি বিপুল খান, ইয়াসিন কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি মামুন খান, ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আলিম হায়দার তুহিন, অপু সাহা কেউই রক্ষা পায়নি। প্রথম আলোর ফরিদপুর প্রতিনিধিকে প্রকাশ্য দিবালোকে সিসি ক্যামেরার সামনে পিটিয়ে আধামরা করলেও পুলিশ অপরাধীদের ধরতে পারেনি। সত্যজিত ধরা পড়ে নাই, কিন্তু তার বন্ধু মোকাররম হোসেন বাবু-কে পুলিশ অনেক নির্যাতন করেছে। অথচ এই দু'জন মন্ত্রীকে এপর্যন্ত আসতে সাহায্য করেছেন। তাকে এমপি করতে জীবন উত্সর্গ করেছেন। এ দু'জন শুনেছি ফরিপুরের আওয়ামীপন্থীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। অথচ মন্ত্রীর আক্রোশে এখন রাতারাতি এরা ক্রিমিনালে পরিনত হয়েছে। অর্থাৎ মন্ত্রীর সাথে থাকলে সাধু আর না থাকলে ক্রিমিনাল!
সত্যজিতের মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ ২৩শে এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। বিএনপি প্রেস কনফারেন্স করেছে। প্রথম আলোর একটি সাংবাদিক দল সরজমিনে গেছেন। শোনা যাচ্ছে, রিপোর্টটি যাতে আলোর মুখ না দেখে তাই তাদের ওপর চাপ আছে। দু'একটি মানবাধিকার সংস্থাও এনিয়ে কাজ করতে চাচ্ছে, কিন্তু প্রবল মন্ত্রীর প্রবলতম চাপ উপেক্ষা করা কারো পক্ষেই সম্ভব হচ্ছেনা। মন্ত্রীর হাত সর্বত্র প্রসারিত। যুক্তরাস্ট্রের ক'টি সংগঠন চিন্তা করছে, দেশে না পারলেও এদেশে তার বিরুদ্ধে কিছু করা যায় কিনা। এই মন্ত্রী যাতে আমেরিকায় ঢুকতে না পারেন সেইলক্ষ্যে একটি আবেদন হচ্ছে। এমনকি এখানে একটি মামলা করার বিষয়টিও বিবেচনাধীন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও সরকারী দফতরে এসব অভিযোগ পেশ হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ফরিদপুরের বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন ও নেতৃবৃন্দের একটি বিবৃতি ৭ আগস্ট মিডিয়ায় এসেছে। এতে বলা হয়েছে, 'মন্ত্রীর চরিত্র ফুলের মত পবিত্র'। মন্ত্রী যে এদের জোর করে বিবৃতি দিয়েছেন বা সভা করিয়েছেন তা বুঝতে পিএইচডি'র দরকার হয়না। এরআগে ১৪জুন একটি মেসেজ বিভিন্ন মিডিয়ায় এসেছিলো, সেটি হচ্ছে: ফরিদপুরের শ্রীঅঙ্গণ এর সাধু, রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ বৃন্দ, ইস্কন মন্দিরের সাধুদের এবং ফরিদপুরের হিন্দু নেতৃবৃন্দদেরকে ডেকে ১৩ই জুন ২০১৫ রাতে মন্ত্রীর ফরিদপুরের বাসভবনে ধমক দিয়ে দয়াময়ী ভবণ নিয়ে সারা পৃথিবীর হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ সহ হিন্দু নেতৃবৃন্দ কর্তৃক দেওয়া বিবৃতি তারা করিয়েছে বলে মন্ত্রী তাদের মা-বাবা তুলে গালিগালাজ করেন। এই ধরণের কোন ঘটণা ফরিদপুরে ঘটে নাই এই মর্মে বিবৃতি দেওয়ার জন্য চাপ দেন৷ নাহলে মন্ত্রী ধরে নেবেন যে সারা পৃথিবীর ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ যে বিবৃতি দিয়েছেন তা ঐ সাধু এবং ফরিদপুরের হিন্দু নেতৃবৃন্দ করিয়েছেন, এবং এজন্যে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে৷"
মন্ত্রী অবশ্য নিজেও একটি স্টেটমেন্ট দিয়েছেন এবং আদ্যোপান্ত কল্পকাহিনী বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, অন্যের উপকার করতে গিয়ে কিনা বিপদে তিনি পড়েছেন! আহা, মন্ত্রীর জন্যে আমার সত্যি দু:খ হয়, বেচারা! অবশ্য এমন কথা আমরা আগেও অনেকের মুখে শুনেছি, হিন্দুর কাছে এটা নুতন কিছু নয়। ৭০ কোটি টাকার সম্পত্তি উনি যদি ২কোটি টাকা দিয়ে কিনেও থাকেন, তাতে তার তো দু:খ হবারই কথা, কারণ এসব ঝামেলা নাহলে বিনামূল্যেই তা পেতেন। বিভিন্ন রিপোর্টে জানা যায়, মন্ত্রীর পিতৃপুরুষ এই বাড়িতে আশ্রিত ছিলেন, আমার জানতে ইচ্ছে করে স্বাধীন বাংলাদেশে উনি কতটাকা ট্যাষ্ক দিয়েছেন। এও জানতে ইচ্ছে করে অরুনবাবুর কাছ থেকে উনি যে ২কোটি টাকা দিয়ে কিনেছেন, সেই অর্থ তিনি কিভাবে পরিশোধ করেছেন!
শুনেছি জুলাইতে ওটা রেজিস্ট্রী হয়েছে। অরুনবাবু তখনও তার বন্দী। মন্ত্রী মহোদয় এসব লেনদেনের নথিপত্র প্রকাশ করে দেন না কেন? ২কোটি টাকা লেনদেনের বিষয়টি সরকারেরও জানার অধিকার আছে, কোন অনিয়ম দেখার দাযিত্ব সরকারের। ভুক্তভুগী আমরা ব্যাঙ্কের লেনদেন দেখতে চাই, স্ট্যাম্পে সই নয়, কারণ আগেই রিপোর্ট হয়েছে, অরুনবাবুর কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। হিন্দুদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আছে, কেউ কেউ এক সম্পত্তি একাধিকবার বিক্রি করেছেন! অরুনবাবু যদি ৭০ কোটি সম্পত্তি ২কোটি টাকায় বিক্রী করতে বাধ্য হন, তাহলে তিনি ন্যায্যমূল্য পেতে আরো অন্তত: ৩৪জনের কাছে একই মূল্যে বিক্রি করতে পারতেন! অরুনবাবুর ঘটনাটি আসলে কিভাবে একজন হিন্দু সম্পত্তি হারায় এবং দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়, এর চমত্কার দৃষ্টান্ত!
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, দয়াময়ী ভবনের মালিক অরুনবাবু ও তার পরিবার এখন কোথায়? মন্ত্রী অসম্ভব দয়ালু, অরুনবাবুদের বাড়ী থেকে জোরজবরদস্তী উচ্ছেদ করে তারই অন্য একটি বাড়িতে আশ্রয় দেন এবং রেজিস্ট্রী হয়ে গেলে ভারতে পাঠিয়ে দেন। অরুনবাবুর চৌদ্দপুরুষের ভাগ্য যে তিনি গুম হননি। জানা যায়, অরুনবাবু এখন কোলকাতায় একমাত্র মেয়েকে নিয়ে চলে আসতে পেরেছেন, সেই আনন্দে আনন্দিত। অবশ্য এও শুনছি, বিপদে পরে মন্ত্রী এখন আবার তাকে খুজছেন, এবং তাকে এনে কোনভাবে সাংবাদিকদের সাথে কথাটথা বলিয়ে এ যাত্রায় রক্ষা পেতে চাচ্ছেন। আরো শুনছি, কোলকাতায় তাকে দিয়ে সব ঘটনা খুলে বলার জন্যে কিছুলোক চেস্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু তিনি সাহস পাচ্ছেন না, একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যত নিয়েই তিনি এখন ব্যস্ত।
মানস মুখার্জী পরিবারের আত্মীয়-স্বজন অনেককে আমি চিনি, জানি। এরা সম্ভ্রান্ত। ৭০ বছরের মানস মুখার্জীর রাস্তায় চাদাবাজির প্রয়োজন পড়ার কথা নয়। আর শিক্ষাদীক্ষা? ওকথা বলে মন্ত্রীকে লজ্জা দিতে চাইনা। ভাবছি, একজন মন্ত্রীর কারণে এতগুলো মানুষ ভুগছে, কেউ কি নাই এর একটা বিহিত ব্যবস্থা করতে পারে? হায়রে দেশ, মন্ত্রীর লম্বা হাত থেকে একজন পঙ্গু সাংবাদিকেরও রেহাই নেই? সভ্য দেশে হলে মন্ত্রী তো দুরের কথা, এতদিনে সরকার নিয়ে টানাটানি পরে যেত!
শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক।
নিউইয়র্ক। ১৬ আগস্ট ২০১৫।
Bangladesh (non-Muslim minority) Hindu Buddhist Christian Unity Council of USA Statement -- May 31, 2015
ঐক্য পরিষদের বিবৃতি: মন্ত্রীর হিন্দু বাড়ী
দখলের নিন্দা-প্রতিবাদ
৩১শে মে ২০১৫, নিউইয়র্ক।
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ রাইটস ওয়াচ
ইন্টারন্যাশানাল, বাংলাদেশ মাইনরিটি ফোরাম, ও বাংলাদেশ হিন্দু ফোরাম এবং আরো কিছু সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এক যৌথ বিবৃতিতে প্রবাস কল্যাণমন্ত্রী মোশারফ হোসেন তার
পাশের হিন্দু বাড়িটি জোর করে দখল করে নিয়েছেন বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও
ইন্টারনেটে প্রকাশিত একটি খবরে গভীর দু:খ প্রকাশ করে এব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী
শেখ হাসিনার প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তারা অভিযোগ
করেন, মোশারফ হোসেন
একইভাবে ফরিদপুরে অনেকগুলো হিন্দু বাড়ী জবর দখল করেছেন, যা তদন্ত করলে
বেরিয়ে আসবে। নেতৃবৃন্দ একই সাথে অভিযোগ করেন, মোশারফ হোসেন
ফরিদপুরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। তারা অবরুদ্ধ পরিবারটিকে বাচানোর
জন্যে আহবান জানান।
উল্লেখ্য, ইন্টারনেট ও কনফারেন্স কলে এসব স্বাক্ষর নেয়া হয়। বাংলাদেশের অনেকে এতে
স্বাক্ষর করেছেন, কিন্তু নিরাপত্তার
খাতিরে তাদের নামগুলো বাদ দেয়া হয়েছে, কারণ মোশারফ সাহেবের
হাত অনেক লম্বা। সামাজিক মাধ্যমে হিন্দু বাড়ী জবরদখলের এই সংবাদ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে
পড়েছে এবং কানাডার শুধুমাত্র একজনের ফেসবুকে ৫৫০-এর
বেশি শেয়ার হয়েছে। এতকিছুর পরও সরকার বা সংশ্লিস্ট মন্ত্রীর পক্ষ থেকে কিছু বলা
হচ্ছেনা। অথচ দুইবার এই আবেদন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। এমনকি
মন্ত্রী মোশাররফ সাহেবের কাছেও পাঠানো হয়েছে ।
বিব্র্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, শিতাংশু গুহ, যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ;
তরুণ চৌধুরী, সভাপতি, ইউরোপীয়
ঐক্য পরিষদ; উদয়ন বড়ুয়া, সভাপতি, ইউরোপীয় ঐক্য পরিষদ; অরুণ বড়ুয়া, বাংলাদেশ মাইনরিটি ফোরাম, জেনেভা; চিত্রা পাল, হিন্দু ফোরাম,
সুইডেন; দিলীপ কর্মকার, ঐক্য
পরিষদ, কানাডা; স্বদেশ বড়ুয়া, সভাপতি, ফ্রান্স ঐক্য পরিষদ; ড:
সান্তায়ন কবিরাজ, বাংলাদেশ রাইটস ওয়াচ ইন্টারন্যাশানাল,
লন্ডন; ড: মোহিত রয়, ক্যাম্ব,
কলকাতা; রবিন গুহ, রাশিয়া;
ডাক্তার রবীন্দ্রনাথ দাশ, মরিশাস; কার্তিক ঘোষ, ইতালী; মৃনাল
মজুমদার, জার্মানি; পুস্পিতা গুপ্ত,
লন্ডন, তুষার কান্তি সরকার, ফিনল্যান্ড; সুরঞ্জিত গুপ্ত, লোকনাথ
মিশন, লন্ডন; প্রবীর মৈত্র, সভাপতি, অস্ট্রেলিয়ান ফোরাম ফর মায়নরিটিজ ইন
বাংলাদেশ; মানস রয়, ক্যালিফোর্নিয়া;
পবিত্র চৌধুরী, নিউইয়র্ক; সুভাষ রায়, নয়াদিল্লী; কবিতা
চাকমা, অস্ট্রেলিয়া, শশাঙ্ক দাশগুপ্ত,
আমেরিকা, শিবাজী রায় ও ভবানী কাশ্যপ, বাংলাদেশ হিউম্যান রাইট কাউন্সিল ওয়ার্ল্ড
চ্যাপ্টার, তুলসী রায়, বাংলাদেশ হিন্দু
কল্যাণ পরিষদ, ফ্রান্স; দূর্গা
ভট্টাচায্য, আমেরিকা; যয়েল কর্মকার প্রমুখ।
খবরটি নিন্মরূপ:
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই পরিবারটিকে বাঁচান
বাড়িটি ফারিদপুরের ঝিলটুলিতে রাজেন্দ্র কলেজ হিন্দু হোস্টেলের বিপরীতে অবস্থিত যা প্রবাস কল্যাণমন্ত্রী মোশারফ হোসেন-র বাড়ীর সাথে লাগোয়া। ওই বাড়ীটির নাম দয়াময়ী আশ্রম যা ভাজনডাঙার জমিদার সতিশচন্দ্র গুহ মজুমদার-এর, যিনি রাজন্দ্রকলেজের উদ্যোক্তাদের অন্যতম। উক্ত জমিদার পরিবারের একমাত্র সদস্য অরুণ গুহ মজুমদারের পরিবার এবং একমাত্র মেয়ে তুলিমজুমদার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে। অরুণবাবু-মোশারফরা বাল্যবন্ধু! বাড়িটি বর্তমানে অর্পিতসম্পত্তি, যা অনেক আগেই মোশারফ সাহেব নিজেই করিয়ে রেখেছিলেন। বর্তমান অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যাবর্তন আইন আংশিক কার্যকরহবার কারণে বাড়িটি আরুন বাবু পেতে যাচ্ছেন। বাড়িটি প্রায় ৩ একর জায়গা
জুড়ে যার বর্তমান দাম কয়েক কোটি টাকা,যাতে একটি দ্বিতল পুরাতন
ভবন আর একটি পুরান মন্দির রয়েছে।
গত ক'দিন আগে মোশারফ হোসেন-র উকিল অরুণ বাবুর কাছ থেকে জোর করে মোশারফ সাহেবের নামে করা একটা বায়নানামা দলিলে সাক্ষর করিয়ে নেয়, আদালত প্রাঙ্গনেই এবং সবার সামনে, কেউ কিছু বলার সাহস পায়নি। গত ১৩ এপ্রিল সকালে মোশারফ সাহেব নিজে তার দলবল নিয়ে এসে আরুনবাবু কে
বাড়ি ছেড়ে যেতে বললে সে অনেক কান্নকাটি করে কিন্তু তাতে কাজ হয়না। মোশারফ হোসেন অরুণ বাবুর পরিবারের সবাইকে জোর করে তারই
এক বাড়িতে রাখেন, অভিযোগ রয়েছে, ঐ
বাড়িটিও তিনি ক'দিন আগে দখল করে
নিয়েছেন আর এক হিন্দুর কাছ থেকে। অরুণ বাবুকে বাড়ি থেকে বের করার সময় তার সামনে মোশারফ
সাহেবের লোকজন মন্দিরটি ভেঙ্গে ফেলে। অরুন গুহবাবুর পরিবারটি-কে মোশারফ হোসেন ফরিদপুরের ভাজন্দাঙ্গার এক বাড়িতে
গৃহ বন্দী করে রেখে তার নিজের গুন্ডা পাণ্ডা দিয়ে ঘিরে রেখেছেন, এমনকি ফোনেও কথা বলতে গেলে তার লোক এসে দাড়িয়ে থেকে কার সাথে কি বলছে টা
মনিটরিং করছে। ওনার বয়স্ক মেয়েটাকেও বের হতে দিচ্ছে না , মোশারফ সাহেব কি করতে চাইছে তা স্পস্ট নয়। সম্ভবত: বাড়িটির আইনি প্রক্রিয়ার জন্য কিছুটা সময় লাগতে পারে। এরপর অরুণবাবুর কি হবে তা কেউ জানেনা। মোশারফ সাহেব সম্ভবত বলতে চাইবে আরুনবাবু তার কাছে বাড়ি বিক্রি করে চলে গেছেন। অরুনবাবু কারো কাছ
থেকে কোন টাকা নেননি। যখন আরুন বাবু কান্না কাটি করে বাড়ি
ছাড়তে চাইছিল না তখন মোশারফ সাহেব বলেছিলেন, আমাকে যত ভাল মনে কর আমি তত ভাল না।
From Anandabazar Patrika, India
Anandabazar August 22, 2015
সম্পত্তি
দখল, হাসিনার বেয়াইয়ের বিরুদ্ধে কমিটি
নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা,
২২
অগস্ট, ২০১৫, ০২:৫৫:২৩
খন্দকার
মোশারফ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই, মন্ত্রী খন্দকার মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে
জোর করে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল করার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গড়ল
বাংলাদেশ সরকার। তবে এই কমিটি নেহাতই লোক দেখানো বলে সমালোচনা উঠেছে।
ফরিদপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মহম্মদ আবিদুর রশিদ
বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন— হিন্দু বৌদ্ধ ক্রিস্টান ঐক্য পরিষদ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে
সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলের যে অভিযোগ করেছে,
তার
সত্যতা নিরুপণের জন্য আমলা ও পুলিশ কর্তাদের নিয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করা
হয়েছে। পাঁচ দিনের মধ্যে এই কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তবে অভিযোগকারী
সংগঠনের এক নেতার কথায়, ফরিদপুর জেলা
প্রশাসনের সকলেই মোশারফের নিজের লোক। মন্ত্রীকে নিষ্কলুষ প্রমাণ করতেই এই কমিটি
গড়া হয়েছে।
সরকার সমর্থক হিন্দু বৌদ্ধ ক্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ
সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত সম্প্রতি অভিযোগ করেন,
ফরিদপুরে
জোর করে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল করছেন এলাকার সাংসদ এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রী
খন্দকার মোশারফের দলবল। নতুন এই মন্ত্রক পাওয়ার পরে মোশারফ সম্প্রতি সরকারে খুবই
প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। তাঁর কাজকর্ম নিয়ে প্রতিবেদন লেখায় হেনস্থা এমনকী হামলার
শিকার হয়েছেন ফরিদপুরের বেশ কয়েক জন সাংবাদিক। বিশিষ্ট সাংবাদিক-সম্পাদক প্রবীর
সিকদার মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে অভিযোগ জানানোয় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তাঁকে
গ্রেফতার করে পুলিশ। দেশ জোড়া প্রতিবাদে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য তাঁকে জামিনে
ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু মামলা তোলা হয়নি। এ দিনও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, প্রবীর সিকদারকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানোটা
ভুল হয়েছিল। গ্রেফতার করা মাত্র তাঁকে জামিন দিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।
এ মাসের ৬ তারিখে ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলন করে হিন্দু
বৌদ্ধ ক্রিস্টান ঐক্য পরিষদ অভিযোগ করে,
শাসক
দলের কিছু মন্ত্রী-সাংসদের নেতৃত্বে সংখ্যালঘুদের ভয় দেখিয়ে দেশছাড়া করে তাদের
সম্পত্তি দখল করা চলছে। এই তালিকায় শেখ হাসিনার বেয়াই খন্দকার মোশারফ ছাড়া সংসদের
হুইপ মাহবুব আরা গিনি, ঠাকুরগাঁওয়ের সাংসদ
দবিরুল ইসলাম ও পিরোজপুরের সাংসদ এম এ আউয়ালের নাম রয়েছে। দু’জনেই শাসক দল আওয়ামি
লিগের সাংসদ।
হাসিনার বেয়াই খন্দকার মোশারফের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ফরিদপুর শহরে প্রায় ৮ বিঘে জমি-সহ সাবেক
জমিদার বাড়িটি তিনি মালিকদের ভয় দেখিয়ে দখল করেছেন। বাড়িটির বাজারমূল্য অন্তত ৭০
কোটি টাকা হলেও, ২ কোটি টাকায় বিক্রির
জন্য মালিকের ওপর চাপ দেওয়া হয়। তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেশ কয়েক দিন আটকেও রাখা হয়।
অভিযোগ, মালিকরা ভারতে চলে
গেলেও প্রাণের ভয়ে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও কথা বলার সাহস দেখাচ্ছেন না। তবে
মন্ত্রী মোশারফ অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে
বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
করা হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment